
ঐক্যবদ্ধ না হলে 'গুপ্ত স্বৈরাচারের' আবির্ভাব হতে পারে: তারেক রহমান
স্টাফ রিপোর্টারঃ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, আগামী দিনে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে।” তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্য, জনগণের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং দলের পুনর্গঠনের ওপর জোর দিয়ে এখনই সকলে মিলে কাজ করে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান জানান।
শনিবার (তারিখ উল্লেখ নেই, তবে সংবাদে বলা আছে) ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান তার বক্তব্যে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে মূলমন্ত্র করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “জনগণ যেভাবে চায়, আমাদের সেভাবে চলতে হবে।” তিনি বক্তব্যে নয়, বরং কাজে মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, “আজকে সম্মেলনের স্লোগান হোক, ঐক্য, জনগণ এবং পুনর্গঠন।”
দলের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করেছে। জেলে গিয়েছে, গুম হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।… মিটিং করে জনগণের কাছে যাওয়া যাবে না। প্রতিটি ঘরে ঘরে যেতে হবে।”
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর পর এই সম্মেলন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দেশের অর্থনৈতিক লুটপাট ও অতীত নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “এই দেশ থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে যে পরিমাণ ঋণ হয়েছে সেই টাকা দিয়ে ৪০টি পদ্মাসেতু নির্মাণ করা যেত।” ব্যাংকিং সেক্টরের পাঁচ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণে জর্জরিত থাকার জন্য তিনি আওয়ামী লীগের ইতিহাসকে ‘লুটপাটের ইতিহাস’ হিসেবে আখ্যা দেন।
তিনি অতীতের ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ ১৪০০ মানুষকে হত্যা এবং ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করার ঘটনা যেন বিস্মৃত না হয়, সে বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন। সালাহউদ্দিন আহমদ ‘৩১ দফার’ কথা উল্লেখ করে এটিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘মহাকাব্য’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, “বিএনপির ইতিহাস সংস্কারের ইতিহাস।” তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, সকল অপরাধের বিচার হবে, কিন্তু এই কারণে নির্বাচন প্রলম্বিত হতে পারে না।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু তার বক্তব্যে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ও শ্রমবাজার সৃষ্টি এবং গার্মেন্টস শিল্প বিকাশে তার অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “যারা ৭১ কে অস্বীকার করে, যারা মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না, তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।” তিনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে ‘ব্যালট বিপ্লবের’ মাধ্যমে তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার আশা প্রকাশ করেন।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন বরকত উল্লাহ বুলু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন এতে সভাপতিত্ব করেন এবং সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
নতুন কমিটি ঘোষণা
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। শনিবারের এই সম্মেলনে বর্তমান আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনকে সভাপতি এবং সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।