নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি জেনে রাখুক আজ, রাজধানীর রাজপথের আজকের এই সমাবেশ-মিছিল, কারও বিরুদ্ধে কারো বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়, বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার মিছিল দেশের, নিজের অধিকার রক্ষার মিছিল, নিজের ভোট প্রয়োগের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিল। বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল করতে হবে। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বিএনপি’র বর্ণাঢ্য র্যালী উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান আরও বলেন, আজকে রাজপথের সমাবেশ, মিছিল কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়, আজকের মিছিল দেশের স্বার্থরক্ষার মিছিল।
শুক্রবার (০৮ নভেম্বর), বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন বর্ণাঢ্য র্যালী শুরু হওয়ার আগে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল— বাংলাদেশের শত্রু মিত্র চেনার দিন। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর শত্রু চিহ্নিত করার দিন। প্রসঙ্গত, আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জড়ো হন। মিছিলে-মিছিলে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিলযোগে বর্ণাঢ্য র্যালীতে যোগ দেন বিএনপি’র নেতা-কর্মীরিা।
র্যালীতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারেক রহমান বলেন, আগেও বলেছি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না। রাজধানী ঢাকার এই রাজপথে লাখো জনতার এই মিছিল, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ৭ই নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, লাখো জনতার আজকের এই মিছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারো শহীদের স্বপ্নে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মিছিল। তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি জেনে রাখুক আজ, রাজধানীর রাজপথের আজকের এই সমাবেশ-মিছিল, কারও বিরুদ্ধে কারো বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়, বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার মিছিল দেশের, নিজের অধিকার রক্ষার মিছিল, নিজের ভোট প্রয়োগের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিল।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, কখনো যেন বাংলাদেশে ফ্যসিবাদ ফিরে আসতে না পারে সেজন্য প্রতিটি নাগরিকের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে জনগণের ভোটের প্রতি যতক্ষণ পর্যন্ত মুখাপেক্ষি করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না।
তারেক রহমান বলেন, এমনকী স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশেও স্বল্প আয়ের মানুষকে বাজার সিন্ডিকেটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যদি না মানুষের সরাসরি ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারি। ‘স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের’ উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আমি একটি বিষয়ে স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাতে চাই, আমি নিজেও সতর্ক থাকতে চাই— সেটি হলো গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনও কিন্তু থেমে নেই। অন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে, প্রশাসনে, এখনও সক্রিয়।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে কোনওভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তবে নিজেদেরকে সতর্ক করতে চাইলে অন্তবর্তীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এটিই আজ জনগণের চাওয়া। ‘আসুন, লক্ষ জনতার এই মিছিলকে কোনওভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।’ এই প্রত্যাশা ও সাফল্য কামনা করে বর্ণাঢ্যর্যালির উদ্বোধন ঘোষণা করেন তারেক রহমান।
এসময় অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর মির্জা ফখরুলসহ মঞ্চে থাকা নেতারা তাকে সালাম দেন। ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা-কর্মীর এ সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এরপর বিএনপি’র বর্ণাঢ্য র্যালী শুরু হয়। নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি কাকরাইল মোড়-কাকরাইল মসজিদ-মৎস্যভবন-ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-শাহবাগ-হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-বাংলামোটর-কারওয়ান বাজার-ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।