চাঁদপুর প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ভেতরে অবস্থিত ‘ন্যায্য মূল্যের’ ওষুধের দোকানে প্রতারণার এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। রোগীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সরবরাহের উদ্দেশ্যে স্থাপিত এই দোকানে দীর্ঘদিন ধরে দ্বিগুণ দামে ওষুধ বিক্রি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ও সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে এবং দোকান মালিককে জরিমানা করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে হাসপাতালের ভেতরে সরকারি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। রোগীরা কিছুটা কম দামে ওষুধ কেনার আশায় এই দোকানে আসেন, কারণ এখানে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ওষুধ পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন।
দোকানের মালিক রামু দত্ত, দীর্ঘদিন ধরে অসহায় রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। সরকারের নির্দেশ ছিল ১৬.৫১ শতাংশ ছাড়ে ওষুধ বিক্রি করতে হবে, কিন্তু তিনি এর সম্পূর্ণ উল্টোটা করে প্রতিটি ওষুধের দাম রোগীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ নিচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি মেয়াদোত্তীর্ণ এবং সরকারি বরাদ্দের ওষুধও লোকচক্ষুর আড়ালে বিক্রি করে আসছিলেন।
পুরান বাজার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং কমিউনিটি পুলিশের সদস্য সেলিম গাজী গত ২৪ ও ২৬ জুন ওই ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ‘সাইনোভিয়া’ ইনজেকশন কিনতে গিয়েছিলেন। অন্য দোকানে যার দাম মাত্র দশ টাকা, সেই ইনজেকশন রামু দত্ত ২৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সেলিম গাজীর সাথে রামু দত্তের বাদানুবাদ শুরু হয়।
এরপর সেলিম গাজী সরাসরি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরানের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই তিনি অভিযানে নামেন। দোকানে গিয়ে তিনি সব অভিযোগের সত্যতা পান। অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অপরাধে রামু দত্তকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই দোকান থেকে ওষুধ কিনে পরে পাল্টাতে এলে ক্রেতাদের সাথে নানা তালবাহানা করা হয়। রামু দত্ত বহুদিন ধরে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন এবং হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই তিনি এই দোকানটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। এর ফলে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা গরিব ও অসহায় রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যারা উন্নত চিকিৎসার আশায় এই হাসপাতালে আসেন।