মোঃ মাছুম বিল্লাহ, ঝালকাঠি জেলা প্রতনিধিঃ
ঝালকাঠির কাঠালিয়া-পাথরঘাটা-ভান্ডারিয়া-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের বীনাপানি খালের ওপর ব্রিজ সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ১৩টি দূরপাল্লার রুটের হাজার হাজার যাত্রী, পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিকল্প রাস্তা তৈরি না করায় যাত্রীদের প্রায় ২৪ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। কবে নাগাদ এই সংস্কার কাজ শেষ হবে, তা জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চলতি মাসের ২১ তারিখে পুরনো আয়রন ব্রিজটির সংস্কার কাজ শুরু হয় এবং ২৮ এপ্রিলের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বর্তমানে কাজের অগ্রগতি এক-তৃতীয়াংশও হয়নি। কোনো প্রকার বিকল্প সড়ক নির্মাণ না করেই ব্রিজটির সংস্কার কাজ শুরু করায় পাথরঘাটা-ঢাকা, আমুয়া-রাজশাহী, পাথরঘাটা-চট্টগ্রাম, কাঠালিয়া-ঢাকা, কাঠালিয়া-চট্টগ্রাম, কাঠালিয়া-খুলনা, খুলনা-কাঠালিয়া-বেতাগী, খুলনা-কাঠালিয়া-মির্জাগঞ্জ, আমুয়া-বরিশাল, পাথরঘাটা-বরিশাল, কাঠালিয়া-ঝালকাঠি, আমুয়া-ভান্ডারিয়াসহ ১৩টি রুটের শত শত যানবাহন, হাজার হাজার যাত্রী, পথচারী ও ব্যবসায়ীদের প্রতিদিনের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা বিকল্প পথ হিসেবে কাঠালিয়া-রাজাপুর সড়কের ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ আঁকাবাঁকা ও খানাখন্দে ভরা রাস্তাটি ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্রিজের নিকটবর্তী কাঠালিয়া সরকারি তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ডিগ্রী কলেজ, কাঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, কাঠালিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, কাঠালিয়া সদর ফাজিল মাদ্রাসা, আলহাজ কেএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনস্বিতা মহিলা কলেজ, আমান উল্লাহ ডিগ্রী কলেজ, এম এ খালেক কৃষি কলেজ, সাবিহা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়, বিনাপানি বিদ্যালয়, আমান আলিম মাদ্রাসা, মধ্য কৈখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঠালিয়া প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এবং বিনাপানি বাজার ও কাঠালিয়া উপজেলা সদরের সাথে যাতায়াতকারী হাজার হাজার শিক্ষার্থী সময়মতো তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারছেন না।
মিজান পরিবহনের চালক মোঃ আব্বাস বয়াতী জানান, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ১৩টি রুটের বাস, পরিবহন ও ট্রাক চলাচল করে। ব্রিজটি ভেঙে দেওয়ায় এবং কোনো বিকল্প পথ না থাকায় গাড়িগুলোকে ২৪ কিলোমিটার বেশি দূরত্ব ঘুরে ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
অটোচালক মোঃ শাহারুম মুন্সী ক্ষোভের সাথে বলেন, বীনাপানির খালের ব্রিজটি ভেঙে ফেলায় তারা যাত্রী নিয়ে ভান্ডারিয়া যেতে পারছেন না। ট্রলার থেকে ওঠানামা করার জন্য কোনো সিঁড়ির ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে এবং তাদের আয়-রোজগারও কমে গেছে।
কাঠালিয়া প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাঃ মরিয়ম আক্তার জানান, ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় এবং বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তাদের বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সেলিম তালুকদার জানান, ব্রিজের সংস্কার কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা নিশ্চিত নয়। বিকল্প পথ না থাকায় যাত্রী, ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকার লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল পারাপার করছেন।
আলহাজ¦ কেএইচএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরিয়ম বেগম বলেন, লোক ও শিক্ষার্থীদের পারাপারের জন্য যে ট্রলারটি দেওয়া হয়েছে, তার অবস্থা খুবই খারাপ। ট্রলার থেকে কাঁদা-পানি ভেঙে উঠতে হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মা, শিশু ও বৃদ্ধদের পারাপারে চরম সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মাসুকুর রহমান জানান, কাজটি শেষ হতে কতদিন সময় লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। বিকল্প সড়ক হিসেবে পারাপারের জন্য ট্রলার দেওয়া হয়েছে। তবে ভাটার সময় পানির স্তর নিচে নেমে গেলে পারাপারে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
ব্রিজ সংস্কারের নামে এমন অব্যবস্থাপনায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দ্রুত সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা অথবা বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা করার জন্য ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।