নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নীতিগত ধারাবাহিকতা, চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গতকাল মঙ্গলবার দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডার প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এই সভায় ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বিডা এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), এবং ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ।
সূচনা বক্তব্যে চৌধুরী আশিক বিন হারুন বলেন, “বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ এবং এটি দলীয় বা রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে।”
বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য বিডার অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য আমরা বর্তমানে কী করছি এবং আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে কী করব, সে বিষয়ে আপনাদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে বলে আশা করি।”
সভায় বিডার কার্যক্রমের ওপর একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন বিডার হেড অফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি। তিনি সংস্কার পরিকল্পনা ও অগ্রগতি প্রতিবেদন এবং বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেন।
তিনি জানান যে, দুই শতাধিক স্থানীয় বিনিয়োগকারী ও অংশীজনের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে বিডা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো সরকারি পরিষেবার মান, নীতির ধারাবাহিকতা, শিল্প পরামর্শ, দুর্নীতি দূরীকরণ এবং সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ।
এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিডা কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করা হয় এবং তাদের মতামত চাওয়া হয়।
সভায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দল এই ধরনের একটি আয়োজনের জন্য বিডা চেয়ারম্যান ও কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানায়। তারা বিডার সংস্কার পরিকল্পনা ও অগ্রগতির প্রশংসা করে এবং দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে বিডার কার্যক্রমের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে।
রাজনৈতিক দলগুলো বিডা কর্তৃপক্ষের কাছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগকারীদেরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানায়।
এছাড়াও, তারা দেশে দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইনি জটিলতা নিরসন, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সাথে বিডা কর্তৃপক্ষকে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছে।
আজকের সভায় রাজনৈতিক দলগুলো দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার দিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সকলের পরামর্শ ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “আমাদের আগামী উপস্থাপনায় সংস্কার পরিকল্পনায় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের সমগ্র বাংলাদেশের বন্দর। এটিকে বিশ্বমানের বন্দরে রূপান্তরিত করতে আমরা চাই, তবে সবার আগে জাতীয় স্বার্থ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের আপস করা হবে না।”
নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এই ধরনের ইতিবাচক আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Gemi