
নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো জুলাই জাতীয় সনদে: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস।
বাসস:
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দেশে ‘নতুন বাংলাদেশের’ সূচনা হলো, যা আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির পথে জাতিকে এগিয়ে নেবে এবং গত ১৬ বছরের নৃশংসতার অবসান ঘটাবে। তিনি এই দিনটিকে “আমাদের নতুন জন্মের দিন” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, কমিশনের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা একযোগে সনদে স্বাক্ষর করেন।অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করছি।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, সকল মতভেদ ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সনদের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই পরিবর্তন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ, আহত ও বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “তাঁদের অবদানের কারণেই আমরা আজকের এই সুযোগ পেয়েছি,” এবং জাতি তাঁদের প্রতি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে। তিনি মনে করেন, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতি নৃশংসতা থেকে সভ্যতায় ফিরে এসেছে, যেখানে আগে আইনের শাসন ছিল না। “এখন আমরা এমন এক সভ্যতা গড়ে তুলব, যা দেখে বিশ্ববাসী ঈর্ষান্বিত হবে,” তিনি বলেন।অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের জাতীয় জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের সংবিধান ও সরকার পরিচালনার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন, যে তরুণরা এই পরিবর্তনের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, তারাই নতুন করে দেশকে গড়ে তুলবে এবং তারাই পথ দেখাবে।
তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যও এক উদাহরণ স্থাপন করেছে। বহু দেশ জানতে চাইবে—কিভাবে গোটা জাতিকে সম্পৃক্ত করে জুলাই সনদ স্বাক্ষর সম্ভব হলো।

তিনি আঞ্চলিক অর্থনীতি গঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, নেপাল, ভুটান ও ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোকে যুক্ত করে সমুদ্রপথে একটি আঞ্চলিক অর্থনীতি গড়ে তুললে সবাই একসঙ্গে সমৃদ্ধ হবে। তিনি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের গুরুত্বও তুলে ধরেন।আপসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করেন যে নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করতে চাই, যা জাতি ও বিশ্ব উভয়ের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।” তিনি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমরা সেই ঐক্যের সুরে নির্বাচনের পথে যাব, যা সনদ স্বাক্ষরের অনুপ্রেরণা দিয়েছে। ঐক্য অটুট রাখুন।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘দ্য রোডম্যাপ অব ফিউচার’ শিরোনামে সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়, যেখানে অতীতের দুঃশাসন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চিত্র তুলে ধরা হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টা সনদে স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং মঞ্চে ফটোসেশনে অংশ নেন।