
ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক
স্টাফ রিপোর্টার:
ভাষাসৈনিক, লেখক ও গবেষক আহমদ রফিক বার্ধক্যজনিত জটিলতায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে (১০টা ১২ মিনিটে) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই গুণীজন প্রয়াত হন। গত ১১ সেপ্টেম্বর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্রনিক কিডনি ফেইলিওর, আলঝেইমার’স ডিজিজ, পার্কিনসন’স ডিজিজ, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স, শয্যা-ক্ষত ও ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন।
আহমদ রফিকের জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শাহবাজপুরে।
তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। তিনি এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন ক্যাম্পাসের ছাত্রদের সঙ্গে মিলে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ভাষা আন্দোলনের পর তিনি সরকারের রোষানলে পড়েন। ফলস্বরূপ, ১৯৫৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একমাত্র ছাত্র হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
সাহিত্য ও গবেষণার জগতে তাঁর অবদান ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৫৮ সালে তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক, যা সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজ ভাবনা ইত্যাদি বহুমাত্রিক বিষয়ে ব্যাপৃত ছিল।
২০০৬ সালে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আহমদ রফিক নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরের একটি ভাড়া বাসায় একাই বসবাস করতেন। জীবনের শেষভাগ ছিল শারীরিক কষ্টের। ২০১৯ সাল থেকে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে। ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে এবং ২০২৩ সাল নাগাদ তিনি প্রায় দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন।
সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদানের জন্য আহমদ রফিক তাঁর জীবদ্দশায় বহু সম্মাননা লাভ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ও রবীন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার।
তাঁর মৃত্যু দেশের শিল্প-সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের মানুষ গভীর শ্রদ্ধায় এই ভাষাসৈনিককে স্মরণ করবে।