
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে মনোবল জুগিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা।
ডেক্স রিপোর্টঃ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি জাতির জন্য এটি প্রয়োজনীয় মনোবল বৃদ্ধি করেছিল।
নোবেল বিজয়ী ইউনূস সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় তার সরকারি সফর শেষে দেশটির জাতীয় সংবাদ সংস্থা বার্নামাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আনোয়ারের সফর এমন এক সময়ে আশার আলো দেখিয়েছিল, যখন দেশ সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি ছিল।
গত ৮ আগস্ট, ২০২৪ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. ইউনূস। তিনি স্মরণ করেন, যুব-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি ছিল “৯ মাত্রার ভূমিকম্পের” মতো। সেই সময় সবকিছু “ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, বিশাল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল এবং কিছুই কাজ করছিল না।”
তিনি বলেন, “আমাদেরকে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটি ছিল খুবই কঠিন কাজ।” তিনি আরও যোগ করেন, “শুধুমাত্র (জঞ্জাল) পরিষ্কার করা নয়, সবকিছু নতুন করে পুনর্গঠনও করতে হবে।”
ড. ইউনূস জানান, যখন তারা এই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজছিলেন, তখনই তারা সুসংবাদ পান যে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন।
আনোয়ার ২০২৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর করেন। শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার দুই মাস পর আনোয়ারই প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে ঢাকা সফর করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “তিনি আমাদের আশা জুগিয়েছিলেন। তার সফর জনগণের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে সুপরিচিত কারণ অনেক বাংলাদেশি সেখানে থাকেন।”
তিনি বলেন, “যখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ‘হ্যাঁ, আমরা আপনাদের পাশে আছি’ বলেন, তখন বাংলাদেশের জনগণের কাছে এর অনেক বড় অর্থ ছিল। তার উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।”
ড. ইউনূস, যিনি একজন অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত, ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। এই ব্যাংক সুবিধাবঞ্চিত, বিশেষ করে নারীদের জন্য জামানত-মুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে। মালয়েশিয়া প্রথম দেশ যারা আমানাহ ইখতিয়ার মালয়েশিয়া প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল গ্রহণ করে।
১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ায় তিন দিনের সরকারি সফরে ইউনূস আনোয়ারের সাথে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক পর্যালোচনা করেন, বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শ্রম, শিক্ষা, পর্যটন এবং প্রতিরক্ষা খাতে। তিনি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে স্থানীয় নেতা ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন।
তিনি তার সফরকে “একটি চমৎকার এবং অত্যন্ত সফল সফর” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন যে এই সফর দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ৫.১ শতাংশ বেড়ে ১৩.৩৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত (২.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) হয়েছে।