
হাইমচরে বছরে ৫২ কোটি টাকার পান বিক্রি হলেও প্রণোদনার আওতায় আসেনি কৃষকরা
হাইমচর (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
মেঘনা উপকূলীয় উপজেলা হাইমচরে পান চাষ সেখানকার অর্থনীতির মেরুদণ্ড। প্রতি বছর এই অঞ্চল থেকে প্রায় ৫২ থেকে ৫০ কোটি টাকার পান বিক্রি হলেও, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিরা কোনো সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাইমচর উপজেলার ২৩৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে এখানে রয়েছে ১ হাজার ৭২টি পানের বরজ। প্রতিদিন সকালে টাটকা পান স্থানীয় বাজার ছাড়াও আশপাশের উপজেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয়।পানচাষি ফারুক গাজী, কলু গাজী, আলী আহমদ দেওয়ান জানান, শীতকাল ছাড়া সারা বছরই পানের ভালো ফলন হয়, যদি না রোগবালাই দেখা দেয়। হাইমচরের অধিকাংশ বাসিন্দা মেঘনার পূর্ব পাড়ে বসবাস করলেও চরাঞ্চলের কৃষকদের আয়ের অন্যতম উৎস এই পান। নদীর সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে টিকে থাকা এই মানুষগুলোর জীবনে পানের গুরুত্ব অপরিসীম।
একজন পানচাষি ইউনুস ভূঁইয়া আক্ষেপ করে বলেন, “অনেক বছর ধরে এই পান চাষ করে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু ঝড় হলে, রোগ হলে কেউ পাশে থাকে না। সহায়তা পাই না।” রোগবালাই, অতিবৃষ্টি কিংবা ঝড়, সবকিছুই পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি করে, অথচ কৃষকরা কখনোই সরকারি প্রণোদনা পান না।
হাইমচরের পান ব্যাপারী মো. রাসেল দুই দশক ধরে এই ব্যবসায় যুক্ত। তিনিবলেন, ‘হাইমচরের বরজ থেকে পান কিনে স্থানীয় বাজারে পাইকারি ও খুচরাবিক্রি করি। বাবুরহাট, মহামায়া, চান্দ্রা বাজারসহ আশপাশের শতাধিকব্যবসায়ী এ পেশায় যুক্ত।
’চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কামতা গ্রামের চেরাগ আলী ৩০ বছর ধরে পানব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার আমি বিভিন্নবাজারে পান বিক্রি করি। হাইমচর থেকে প্রতিবার অর্ধলাখ টাকার পান কিনি। এইব্যবসার ওপরই আমার সংসার চলে।’
হাইমচর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শাকিল খন্দকার জানান, হাইমচরের পানচাষিরা বংশ পরম্পরায় এই আবাদ করে আসছেন। তাদের শ্রমে কোটি টাকার অর্থনীতি গড়ে উঠলেও, প্রকৃত সংকটে সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় মাঠের মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কৃষি অফিস থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগবালাই দেখা দিলে কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় বলে তিনি বলেন।হাইমচরের সচেতন মহল মনে করছেন এই সমৃদ্ধ পানের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।