
বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ‘বিপ্লবী’ পোর্টেবল এআই আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইস।
বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ‘বিপ্লবী’ পোর্টেবল এআই আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইস।
স্টাফ রিপোর্টার
দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে একটি “বিপ্লবী” পোর্টেবল এআই-চালিত আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সো ইমেজিং এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসছে, যা গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকেও সহজে উচ্চমানের রোগ নির্ণয়ের সুবিধা দেবে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) এক্সো ইমেজিংয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ হক এবং সন্দীপ আক্কারাজু বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এই প্রযুক্তি ও এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। এই ডিভাইসের মূল উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য এবং কার্যকর করে তোলা।
এই পোর্টেবল আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইসটি সাধারণ স্টেথোস্কোপের মতোই সহজে বহনযোগ্য। এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ইউসুফ হক জানিয়েছেন, এটি হৃদরোগ, যক্ষ্মা, স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ, থাইরয়েড সমস্যা এবং গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত জটিলতার মতো বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক সনাক্তকরণে সহায়তা করবে। এক্সোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ডিভাইসটি ডাক্তার এবং নার্সদের জন্য রোগ নির্ণয়কে আরও দ্রুত এবং সহজ করে তুলবে। রোগীরা পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিকভাবে রোগ নির্ণয়ের সুযোগ পাবেন।
এক্সোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ আক্কারাজু বলেন, বাংলাদেশই এশিয়ার প্রথম দেশ যেখানে এই প্রযুক্তি চালু হচ্ছে। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় এবং দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) দ্বারা অনুমোদিত। তিনি জানান, মেক্সিকো এবং কিছু ল্যাটিন আমেরিকান দেশেও এটি শীঘ্রই চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি যেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মতো শোনাচ্ছে। আমরা জানি, রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু হয়। এই প্রযুক্তি রোগীর রোগ নির্ণয়কে আরও কাছাকাছি এনে সেই বোঝা কমাতে সাহায্য করতে পারে।” তিনি এই ডিভাইসকে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন।
এক্সোর বোর্ড সদস্য এবং ইন্টেল কর্পোরেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ওমর ইশরাক বলেন, এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ নেই, আর এই ধরনের প্রযুক্তি সেই ব্যবধান কমাতে সাহায্য করবে। তিনি এটিকে “পরবর্তী প্রজন্মের স্টেথোস্কোপ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
প্রাথমিকভাবে এক্সো এই ডিভাইসটি দেশের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালগুলোতে চালু করার পরিকল্পনা করছে, এবং পরবর্তীতে এর ব্যবহার গ্রামীণ ও কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও ছড়িয়ে দেওয়ার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য রয়েছে। এক্সো একই সাথে রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া, ফলো-আপের জন্য রিমাইন্ডার পাঠানো এবং রোগী-চিকিৎসকদের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করতে সহায়ক সফ্টওয়্যারও তৈরি করছে।
এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাইদুর রহমান, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।