
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
হাইমচর (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ
২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫ বাস্তবায়নে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় সচেতনতা সভা ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় উপজেলার চরভৈরবী মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে উপজেলা প্রশাসন ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে এই সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে জেলেদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার এবার মা ইলিশ নিধনে কঠোরতম পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। নিষেধাজ্ঞার সময় মা ইলিশ শিকার করলে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছর জেলের পাশাপাশি নৌকা, জালসহ সকল সরঞ্জাম ধ্বংস করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, সরকার মা ইলিশ সুরক্ষায় অত্যন্ত কঠোর। জেলেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য নদীতে মাছ থাকা অপরিহার্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “নদীতে মাছ না থাকলে জেলেদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না কোনোদিনও।” তিনি উল্লেখ করেন, জেলেদের ভালো করাই সরকারের লক্ষ্য এবং সেই ভালোটি হচ্ছে নদীতে যেন মাছের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ে। এর জন্য মা মাছকে বাঁচতে দিতে হবে, জাটকাকে বাঁচতে দিতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে এবার শাস্তির পরিমাণ বহু গুণ বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় একজন জেলেকে আটক করা হলে পূর্বে যেখানে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ছিল, এখন তা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই বছর জেল করা হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকারকারীদের যেন বেশি জেল দেওয়া হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই সময়ে সকল মাছ বিক্রির আড়ত বন্ধ থাকবে। যদি কোনো আড়তদার মাছ বিক্রি করেন বলে সংবাদ আসে, তবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে এবং সারাজীবনের জন্য তাদের আড়তদারি বন্ধ করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে, চাঁদপুরের যতগুলো বরফ কল আছে, সবগুলো এই অভিযানের সময় বন্ধ থাকবে।
মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার সময় কেউ নদীতে মাছ শিকার করতে নামলে দুটি মামলার আসামি হবেন। একটি হচ্ছে সরকারি আদেশ অমান্য এবং অন্যটি হচ্ছে মা ইলিশ শিকার করার জন্য। এছাড়াও, যে নৌকাটি দিয়ে মাছ শিকার করা হবে সেই নৌকা এবং জালসহ আনুষঙ্গিক সকল সরঞ্জাম ধ্বংস করা হবে।হাইমচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত রায় এর সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ.বি.এম আশরাফুল হক এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর অঞ্চল পুলিশ সুপার নৌ পুলিশ সৈয়দ মোশফিকুর রহমান, চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, ও চাঁদপুর কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শওকত আহমেদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক, নীলকমল নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ, কোস্টগার্ড হাইমচর, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয় জেলে ও মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ীরা।
এছাড়াও বিকেল সাড়ে পাঁচটায় উপজেলার কাটাখালি মৎস্য আড়ত এলাকায় একটি সংক্ষিপ্ত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন এবং চাঁদপুর অঞ্চল পুলিশ সুপার নৌ পুলিশ সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযানের সময় সকল কার্ডধারী জেলেদের কে ২৫ কেজি করে ভিজিএফ আওতায় চাল দেওয়া হবে। ইলিশ সংরক্ষণের জন্য চিহ্নিত ২০টি জেলার মধ্যে চাঁদপুর জেলাকে খুবই অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় যেন কোন জেলে নদীতে না নামে জেলেদের প্রতি প্রশাসনের এটি অনুরোধ।