
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্যের অভিযোগ রাসিক সচিব রুমানা আফরোজ এর বিরুদ্ধে।
স্টাফ রিপোর্টার:
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) হিসেবে পদায়ন করা হলেও, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) সচিব রুমানা আফরোজ এখনও তার পূর্বের দায়িত্ব পালন করছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর জারি করা সরকারি আদেশ অমান্য করে তার কর্মস্থলে বহাল থাকা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খলা ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন (নং-০৫.০০.০০০০.১৩৯.১৯.০১০.২৪-৩২৭) অনুযায়ী, রুমানা আফরোজকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) হিসেবে পদায়ন করা হয়। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পর তাকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাও অর্পণের কথা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ ছিল। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে যোগদান না করে রাসিক সচিব হিসেবে নিয়মিত অফিস করছেন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বদলির আদেশ সত্ত্বেও রুমানা আফরোজ নিয়মিত অফিসে আসছেন এবং সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে প্রশাসনিক কাজে বিভ্রান্তি ও অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।” অথচ স্পষ্ট সরকারি নির্দেশ অমান্য করে তার আগের পদে বহাল থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক মহলে।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “বদলির প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নে বাধা থাকলে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা উচিত। সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি আদেশ অমান্য করার অধিকার নেই।”
তবে রাসিক প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচিবের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে যুক্তি দেখিয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজাউল করিম। তিনি বলেন, সাধারণত একজনের বদলি হলে তার স্থলে আরেকজনকে পদায়ন করা হয়। রুমানা আফরোজকে এডিসি হিসেবে পদায়ন করা হলেও, তার স্থানে রাসিকে কাউকে পদায়ন করা হয়নি। তিনি চলে গেলে রাসিকের প্রশাসনিক কাজ থমকে যেতে পারে, তাই তিনি এখনও রয়েছেন। সিইও আরও জানান, তার স্থানে কাউকে বদলি করা হলেই তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। রাসিক প্রশাসনের ‘গুড লিস্টে’ থাকা রুমানা আফরোজের ক্ষেত্রে এই যুক্তি দেখানো হলেও, সরকারি নির্দেশ অমান্য করা কেন সঠিক—সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে, রাসিকের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাসিকের প্রশাসক খোন্দকার আজিম আহমেদ মাসখানেকের মধ্যেই বদলি হতে পারেন। সম্ভবত তার বদলির পরপরই সচিব রুমানা আফরোজ তার নতুন কর্মস্থলে যোগদানের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
বদলির আদেশ কার্যকর না হওয়ার বিষয়ে সচিব রুমানা আফরোজ নিজে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাসিকের প্রশাসক খোন্দকার আজিম আহমেদের সাথে একাধিক দিন যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাক্ষাত পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, রাসিকের সচিব রুমানা আফরোজের সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন উপজেলায় দায়িত্বপালন করার সময় তার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল।
- নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) থাকাকালে তাকে বদলি করা হলে ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় উপজেলার নজিপুর পৌরশহরে স্থানীয় বাসিন্দারা মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন।
- ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার আদমদীঘি এলাকাবাসীর আয়োজনে সদর বাসস্ট্যান্ড প্রাঙ্গণে ইউএনও রুমানা আফরোজকে অতি দ্রুত অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন করা হয়। “২০২৪ সালের আওয়ামী লীগের দুই বারের অবৈধ নির্বাচনে সরাসরি সহযোগিতা কারী আওয়ামী দোসর দুর্নীতিবাজ ইউএনও রুমানা আফরোজ এর আদমদীঘি উপজেলা থেকে দ্রুত অপসারণ চাই”—এমন শ্লোগান লেখা ব্যানারে এই কর্মসূচী পালন করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও একজন কর্মকর্তা কিভাবে আগের পদে বহাল থাকতে পারেন এবং রাসিক প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সরকারি আদেশ অমান্য করাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা—এই সব নিয়ে প্রশাসনিক মহলে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে।