মেঘনার বুকে জাগরণ: হাইমচরের উন্নয়নে এক ইউএনওর অবদান

লেখকঃ জাহিদুল ইসলাম

চাঁদপুরের আটটি উপজেলার মাঝে শান্ত স্নিগ্ধ এক জনপদ হাইমচর, মেঘনা নদীর কোলে বেড়ে ওঠা। ছয়টি ইউনিয়ন আর চুয়ান্নটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই জনপদের প্রায় অর্ধেকটাই নদীগর্ভে বিলীন। তবুও আলগী বাজারকে কেন্দ্র করে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা বহমান। দীর্ঘকাল ধরে এই উপজেলা পরিষদের প্রবেশমুখে কোনো গেট ছিল না, ছিল না কোনো শহীদ মিনার – যেন উন্নয়নের ছোঁয়া কিছুটা দূরেই ছিল।

ঠিক তখনই হাইমচরের ভাগ্যাকাশে উদিত হন এক স্বপ্নদ্রষ্টা, উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পরপরই শুরু হয় তার কর্মযজ্ঞ। পরিষদের প্রবেশপথে নির্মিত হয় এক সুদৃশ্য গেট, সংস্কার করা হয় সীমানা প্রাচীর। জাতীয় দিবস পালনের জন্য তৈরি হয় একটি শহীদ মিনার, আর স্থানীয়দের সভা-সমাবেশ ও বিশ্রামের জন্য নির্মিত হয় ‘তারুণ্যের মঞ্চ’। ছোট ও অপ্রতুল সম্মেলন কক্ষের পরিবর্তে তার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নির্মিত হয় আধুনিক এক সম্মেলন কেন্দ্র – ‘পদ্মজল’। এখানেই শেষ নয়, দীর্ঘ চার বছর ধরে বন্ধ থাকা উপজেলা মসজিদের নির্মাণ কাজ তিনি নতুন করে শুরু করেন, যার অর্ধেক কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

হাইমচরে তেমন কোনো দর্শনীয় স্থান না থাকায়, পরিষদ চত্বরের পুকুর পাড়ে স্থাপন করা হয় মনোরম ব্রঞ্চ, যেখানে বসে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করা যায়। পুকুর পাড় দিয়ে হাঁটার জন্য একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য তিনি বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছেন মন্ত্রণালয়, যার কাজও শীঘ্রই শুরু হবে বলে আশা করা যায়।

এই উপজেলায় যোগদানের পর অল্প সময়ের মধ্যেই উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। ছুটে গিয়েছেন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কথা বলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে তিনি নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও চালানো হয়েছে অভিযান। তবে তার সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ ছিল মেঘনা নদীতে ঝাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা করার জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই কর্মঠ ও জনদরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইতিমধ্যেই বদলি হয়েছেন। বিদায় বেলায় উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “এই উপজেলায় যোগদানের পরই মনে হয়েছিল যেন এটি আমার নিজের উপজেলা। যা কিছু করেছি, সবই সরকারের কাজ। তবে আমি চেয়েছি হাইমচরের জন্য কিছু করে যেতে, নিজের উপজেলার মতো করে সাজিয়ে তুলতেছি। হাইমচরকে আমি নিজের মতো করে ভালোবেসেছি। হাইমচরবাসীর কথা আমার চিরজীবন মনে থাকবে। মেঘনা নদী বিধৌত এই হাইমচর সত্যিই খুব সুন্দর।”

উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা হয়তো আজ হাইমচরে নেই, কিন্তু তার হাতের ছোঁয়া, তার বাস্তবায়িত প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজ দীর্ঘকাল ধরে এই জনপদের মানুষের স্মৃতিতে অমলিন থাকবে। মেঘনার ঢেউয়ের মতো বয়ে আসা হাইমচরের ইতিহাসে তিনি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে গিয়েছেন, উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Most Popular

Categories

On Key

Related Posts

হাইমচরকে আমি আমার নিজের মতো করে ভালোবেসেছি: ইউএনও উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা

হাইমচরে উপজেলা পরিষদের নতুন সম্মেলন কক্ষের উদ্বোধন হাইমচর (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী

হাইমচরে বজ্রপাতে দিনমজুর আহত, উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ

হাইমচর (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: চাঁদপুরের হাইমচরে বজ্রপাতে দিনমজুর আহত, উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৪ মে) বিকাল সাড়ে ৪টায় হাইমচর উপজেলার ২নং উত্তর

শাহরাস্তিতে কৃষি জমির মাটি বিক্রির দায়ে ব্যবসায়ীর জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে কৃষি জমির মূল্যবান টপ সয়েল (উপরের স্তর) অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক মাটি ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। উপজেলা

মেঘনার বুকে জাগরণ: হাইমচরের উন্নয়নে এক ইউএনওর অবদান

লেখকঃ জাহিদুল ইসলাম চাঁদপুরের আটটি উপজেলার মাঝে শান্ত স্নিগ্ধ এক জনপদ হাইমচর, মেঘনা নদীর কোলে বেড়ে ওঠা। ছয়টি ইউনিয়ন আর চুয়ান্নটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই

Contact

Social

© Copyright 2024 banglaralo24tv. All right reserved.