
গত তিন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা পাবেন না নির্বাচনী দায়িত্ব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর
স্টাফ রিপোর্টারঃ
আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল (১২ অক্টোবর, ২০২৫) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির সভায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় এই ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে অনুষ্ঠিত গত তিনটি নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪) দায়িত্বপ্রাপ্তদের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আসন্ন নির্বাচনের সময়, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য পূর্ববর্তী নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারীদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকুন।” বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে ব্রিফিংকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অঙ্গীকার ও কর্মপরিকল্পনা
নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন নিশ্চিত করতে সরকার সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান জাহাঙ্গীর। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, “কোন সমস্যা হবে না, নির্বাচন আরও ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হবে।”
বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আরও ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে:
- বিশৃঙ্খলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: নির্বাচনের আগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সাথে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- সমন্বয় ও কর্মপরিকল্পনা: সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বয় করে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় তা নিশ্চিত করার জন্য একটি স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
- মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা: জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাঠ পর্যায়ের ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- অবৈধ কর্মকাণ্ডে সতর্কতা: আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের যেকোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির ব্যবহার
নির্বাচনী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কার্যকর পর্যবেক্ষণের উপর জোর দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি জানান:
- সিসিটিভি ক্যামেরা: সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং কার্যকর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- শরীরে পরা ক্যামেরা: আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শরীরে পরা ক্যামেরার ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয়তার উপরও তিনি জোর দেন।
আইনশৃঙ্খলা ও জনবল
আসন্ন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির প্রশিক্ষণ দ্রুত সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি জানান, আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিপুল সংখ্যক জনবলকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে:
- ১.৫ লক্ষ পুলিশ সদস্য
- ৫.৮৫ লক্ষ আনসার সদস্য
- ৩৩,০০০ বিজিবি সদস্য
এছাড়াও, আগামী নির্বাচনের সময় ৮০,০০০ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, আসন্ন ১৩তম সংসদ নির্বাচনে সীমানা নির্ধারণের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আকস্মিক মিছিল আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ভালো এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
দুর্গাপূজা ও মাদকবিরোধী অভিযান
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, ফ্যাসিস্ট এবং তাদের সহযোগীরা দুর্গাপূজা উৎসবের শান্তিপূর্ণ উদযাপন ব্যাহত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেছিল, যেখানে কিছু ফ্যাসিস্ট বুদ্ধিজীবীও ইন্ধন জুগিয়েছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছে।
তাছাড়া, সমাজ থেকে মাদকের ভয়াবহতা দূর করার জন্য সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। জাহাঙ্গীর বলেন, “আমরা কেবল মাদকের বাহকদেরই নয়, মাদকের গডফাদারদেরও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য বলেছি।”