
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদটির আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। তিনি আরও জানান, সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, তবে গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে—জাতীয় নির্বাচনের আগে নাকি একই দিনে—তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
বুধবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের আলোচনার তৃতীয় পর্যায়ের পঞ্চম দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ তথ্য জানান। এই বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, এবি পার্টিসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর দেওয়া মতামত সমন্বয় করে কমিশন আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে চূড়ান্ত পরামর্শ সরকারকে দেবে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রস্তুত এবং কমিশন ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই এই ঐতিহাসিক দলিলের আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে চায়।
সনদ স্বাক্ষরের পাশাপাশি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে, যা ১৮-১৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এই প্রতিবেদনে জুলাই সনদ প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর জমাকৃত দলিল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া, সনদ প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়ার একটি বিশেষ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও খুব দ্রুত সংশ্লিষ্ট দল ও জোটগুলোকে অবহিত করা হবে।
ড. আলী রীয়াজ নিশ্চিত করেন যে, গত ৫ অক্টোবরের বৈঠকে কমিশন সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয় যে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যবস্থা করা হবে। বুধবারের আলোচনার মূল বিষয় ছিল—গণভোট কীভাবে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তিনি জানান, একটি আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করতে হবে। এই আদেশে ঐকমত্যের বিষয়গুলো এবং নোট অব ডিসেন্ট (লিখিত ভিন্নমত) থাকা বিষয়গুলো দুটি আলাদা অংশে থাকবে। গণভোটে অনুমোদন মিললে জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংশোধনগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠন করা হবে।
তবে গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে:
- কিছু দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই পৃথক ভোটে গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে।
- আবার কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে।
কমিশন মনে করছে যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে যে, ত্রয়োদশ সংসদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষমতা দিতে হবে।
কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কমিশনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে, কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে এবং দিকনির্দেশনা দেওয়ায় কমিশন প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের এই ধারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জনটি হয়েছে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে গত বছর ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানো। আমাদের এ জাতীয় ঐক্য অক্ষুণ্ন রাখতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। আপনারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা করবেন কিন্তু ঐক্য বজায় রেখেই সেটা করতে হবে।”
কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এদিনের বৈঠকে কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার অংশ নেন।