
লবণাক্ত জমিতে কৃষি বিপ্লব: বিধান মণ্ডলের ১৭৩ জাতের ফল ও সবজি চাষ।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ৪২ বছর বয়সী কৃষক বিধান মণ্ডল মাত্র এক বছরের মধ্যে ১৭৩ জাতের দেশি-বিদেশি ফল ও সবজি চাষ করে সবার নজর কেড়েছেন। কৃষি বিভাগের (DoE) সহায়তায়, লবণাক্ততাপ্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলে বিদেশী ফল ও সবজি চাষের মাধ্যমে তিনি খুলনা তথা সারা দেশে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে চান।
একসময় গাছপালা, ইঁদুর ও সাপে ভরা পতিত জমি হিসেবে পরিচিত ২২ নম্বর পোল্ডারের অধীনে ডিহিবুরা খালের তীর এখন সবুজের সমারোহ। তরুণ খাল ইজারাদার বিধান মণ্ডল ১৫ একর খাল মাছ চাষের জন্য লিজ নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি শুধু মাছ চাষে সীমাবদ্ধ থাকেননি; বর্ষাকালে তিনি পার্শ্ববর্তী ৩৩ একর পরিত্যক্ত খালের তীরে ফল ও সবজি চাষ শুরু করেন।
মণ্ডল অফ-সিজন তরমুজ, রক মেলন (সাম্মাম), কুমড়া, করলা, লাউ, গজ লম্বা শিমসহ মোট ১৭৩ প্রকার দেশি-বিদেশি ফসলের জাত চালু করেছেন। বর্তমানে, ১১ ধরণের অফ-সিজন তরমুজ এবং আট ধরণের রক মেলন খালের তীরে সবুজ ট্রেলিসে শোভা পাচ্ছে।
প্রায় ৩০,০০০ তরমুজ গাছ থেকে ৬০,০০০-৬৫,০০০ ফল এবং ২৪,০০০ রক মেলন গাছ থেকে আরও ফল আশা করছেন তিনি। প্রতি কেজি ৬০ টাকা বাজারমূল্য নির্ধারণ করে তার ১৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আয়ের লক্ষ্য রয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনি সাপ্তাহিক প্রায় ২০০ কেজি সবজি বাজারজাত করা শুরু করেছেন।
এই উদ্যোগে ৪০-৪৫ জন পুরুষ ও মহিলার জন্য দৈনিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি জাপান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন এবং চাষে জৈব সারের পাশাপাশি উন্নত ফসল সুরক্ষা রাসায়নিক ব্যবহার করেছেন। তার মোট বিনিয়োগ ৩৬ লক্ষ টাকা হলেও, সবকিছু ঠিক থাকলে ১০ লক্ষ টাকারও বেশি লাভ হবে বলে তিনি আশাবাদী।
তবে, বিধান মণ্ডল দুর্বল সড়ক যোগাযোগকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে কালিনগর থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা দ্রুত নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে বাজারে পণ্য পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।
পাইকগাছার এই অফ-সিজন তরমুজ এবং রক মেলন প্রকল্পটি স্মার্ট চাষের একটি মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একরামুল হোসেন বলেন, “লবণাক্ত জমিতে যেখানে বিদেশী জাতের ফল এবং সবজি জন্মে, সেখানে এটি একটি নতুন উদাহরণ।” পাইকগাছার ইউএনও মহেরা নাজনীন বিধান মণ্ডলকে রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। খুলনা কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম কৃষকদের মাছ চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের ফল ও সবজি চাষ করার পরামর্শ দেন, যার লক্ষ্য উল্লেখযোগ্যভাবে আয় করা।